প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। মৃত্যুর পরবর্তী ঠিকানা সাড়ে তিন হাত মাটির ঘর। কবর! নাম শুনলে যেন গা শিউরে ওঠে। কেউ কবরে শুইতে রাজি আছে এমন ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। নিয়তির নির্মম পরিহাস। ইচ্ছা থাকুক বা না থাকুক মুসলিম হলে কবরে অবশ্যই শুইতে হবে। যে মানুষটি গতকাল রাতে একসঙ্গে ভাত খেল। একসঙ্গে ঘুমাল। আজ খাবার টেবিলে আমি একা আছি। শুধু পাশের মানুষটি নেই। প্রিয় মানুষটিকে আর হাত ছুঁয়ে আদর-স্নেহ করা যাবে না। আর দুধ-ভাত খাওয়ান যাবে না। একসঙ্গে অনেক বছর কাটানোর পর প্রিয় মানুষটিকে হঠাৎ করে সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে রেখে আসা। কিংবা কবরে সমাহিত করা। আপনজনের জন্য এর চেয়ে কষ্টকর বিষয় কি হতে পারে। অথচ এ মাটি আপনজনের গায়ে লাগার সঙ্গে সঙ্গে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে হতো। আজ আপনজনেরা কবরে শায়িত মৃতের গায়ের ওপর মাটির ছাউনি স্পর্শ করে শেষ ভালোবাসা জানাচ্ছেন। যেই মাটি গায়ে লাগলে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করা হতো। সে মাটি আজ সবচেয়ে বেশি আপন। কবরে শায়িত হওয়ার বিষয়টি একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে যে কারও দু’চোখ পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। মৃত্যুর মাধ্যমে দুনিয়ার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং আখেরাতের জীবন শুরু হয়। কবর আখেরাতের জীবনের প্রথম ধাপ। কবরে শায়িত ব্যক্তি দুনিয়ার জীবনে পাপ-পুণ্যে যা অর্জন করবে ইহাই আখেরাতের সম্বল। সূরা হাশরের ১৮নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, তোমরা যারা ঈমান এনেছ, আল্লাহ পাককে ভয় কর, প্রত্যেকের উচিত লক্ষ্য করা, আগামীকালের জন্য তোমরা কি পেশ করতে যাচ্ছে। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কোরআনের আয়াত। ওই আয়াতে আগামী দিনের কবর জীবনের সম্বল সম্পর্কে বান্দাকে অগ্রীম ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। কবরবাসীর মধ্যে যারা দুনিয়াতে নেক আমল করার পাশাপাশি মসজিদ-মাদরাসা, এতিমখানা, পুল, কালভার্ট, ধর্মীয় কিতাবাদি ইত্যাদি রচনা করে গিয়েছেন। এগুলো মৃত্যুর পর কবর জীবনের আগামী দিনে মৃত ব্যক্তিকে সাহায্য করবে। পাশাপাশি মৃত ব্যক্তির নাজাতের উপায় হিসেবে আপনজনের দোয়া রহমত হিসেবে কাজে আসবে। মুসলিম শরিফে হজরত আয়েশা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, তিনি একদিন হজরত রাসূল (দ.) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূল (দ.)! কবর জিয়ারতের সময় আমি কি বলব? রাসূল (দ.) বললেন, সালাম হউক মুমিন ও মুসলিমদের বাসস্থানের অধিবাসীদের ওপর এবং দয়া করুন আল্লাহ আমাদের মধ্যে থেকে যারা প্রথমে কবরে গিয়েছে তাদের প্রতি এবং যারা কবরে পরে আসবে। আমরাও ইনশাআল্লাহ শিগগিরই তোমাদের (কবরবাসীর) সঙ্গে যুক্ত হব।
বায়হাকী শরিফে হজরত নোমান (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে হজরত রাসূল (দ.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক জুমার দিনে নিজ মাতা-পিতার অথবা তাদের মধ্যে যে কোনো একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে মাফ করে দেয়া হবে এবং তাকে পিতা-মাতার প্রতি উত্তম ব্যবহারকারী হিসেবে নাম লিখা হবে। ইবনে মাজাহ শরিফে হজরত মাসুদ (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে হজরত রাসূল (স.) এরশাদ করেন, কবর জিয়ারত দুনিয়ার আসক্তি কমিয়ে দেয় এবং আখেরাতকে স্মরণ বাড়িয়ে দেয়। আহমদ শরিফে হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে হজরত রাসূল (দ.) এরশাদ করেন, আল্লাহ বেহেশতে তার কোনো কোনো বান্দার মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন, বান্দা তাঁর অতিরিক্ত মর্যাদার কারণ আল্লাহর নিকট জানতে চাইলে আল্লাহ বলবেন, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা চেয়েছে। ইহার জন্য বেহেশতে তোমার মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বোখারী ও মুসলিম শরিফে হজরত আবু হোরায়রা কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল (দ.) এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালার একশত রহমত রয়েছে। যা থেকে মাত্র একটি রহমত তিনি জিন, মানব, পশু-পাখি ও কীট পতঙ্গকে দান করেছেন। একটি রহমতের কারণে প্রত্যেক সৃষ্টি একে অপরকে মায়া-মহব্বত করে। বাকি নিরানব্বইটি রহমত আল্লাহ পরবর্তী সময়ের (আখিরাতের) জন্য রেখে দিয়েছেন। যা দ্বারা তিনি কেয়ামত দিবসে তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। নেক সন্তান মৃত ব্যক্তির জন্য একটি উত্তম হাসানা। নেক সন্তান যতদিন দুনিয়াতে ইবাদতে মশগুল থাকবেন ততদিন পর্যন্ত বাবা-মায়ের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতে থাকবেন। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে যার সন্তান আলেম দীনদার কামেল পরহেজগার মুত্তাকি তিনি অন্যান্য কবরবাসীর তুলনায় পৃথক মর্যাদাবান। কারণ তিনি দুনিয়ার জমিনে না থাকলেও সন্তান তাঁর পিতা-মাতাকে ভুলে যায়নি।
কবর দেখলে বলতে হয় ‘আস সালামু আইকুম ইয়াহলাল কবুর, ওয়া রাহমাতুল্লাহ’। অর্থ হে কবরবাসী! তোমার ওপর শান্তি বর্ষিত হউক। মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সালাম জানানোর পর সূরা ফাতেহা পাঠ করলে কবরবাসীর আত্মা প্রশান্তি লাভ করে। সন্তান বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সালাম দোয়া দুরূদ পাঠ করলে আল্লাহ মৃত ব্যক্তির কবরকে ওই সময়ের জন্য রহমতের চাদর দিয়ে ডেকে দেন। মৃত ব্যক্তির কবর জিয়ারতকালীন সময় কবরে আজাব চলতে থাকলে তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়। সূরা আল ইমরানের ১৩৯নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজের প্রতি অবিচার করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। ওই আয়াতে আল্লাহ তাঁর বান্দাকে আশাহত হতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ প্রত্যাশা করেন বান্দা যত গুনাহ করুক, তারা যেন পুনরায় তাঁর নিকট ফিরে আসে। কারণ আল্লাহ তাঁর বান্দাকে সব সময় ক্ষমা করতে প্রস্তুত থাকেন। আল্লাহ তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য শুধু একটি উছিলা খোঁজেন। কি করে তাঁর বান্দাকে তিনি মাফ করবেন। তাই মৃত্যু পরবর্তী আপনজনের দ্বারা কবর জিয়ারত কিংবা দুনিয়ার জীবনের রেখে যাওয়া যে কোনো একটি সদকায়ে জারিয়া কাজ কবরের আজাব নাজাতের ফায়সালা হয়ে যেতে পারে। যে মাতা দশ মাস গর্ভে ধারণ করল শীত-গরম সহ্য করল সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে উহ আহ শব্দ করল না এবং বাবা মাথার গাম মাটিতে ফেলে সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য রুজি করল। সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করল। অথচ বাবা-মায়ের কবরের পাশে অনেক নিষ্ঠুর সন্তান দেশে থেকেও সময়ের ব্যস্ততার জন্য বাবা-মায়ের কবর জিয়ারতের সময় পায় না। ইহা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক বিষয়। সন্তানের অর্থবিত্ত বৈভব বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। যে কবরে বাবা শুয়ে আছেন, সে কবরে একদিন আমাকে আপনাকে শুইতে হবে। আপনি আপনার বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করলে আপনার সন্তানও আপনার কবর জিয়ারত করবে। আপনার সন্তান আপনার কবর জীবনের দুঃসময়ে আল্লাহর নিকট নাজাতের জন্য প্রার্থনা করবেন। হয়তো আপনার সন্তানের প্রার্থনা আপনার নাজাতের ফায়সালা হয়েও যেতে পারে। কবর জিয়ারতের বহুবিধ ফজিলত রয়েছে। যা সামান্য পরিসরে শেষ করা যাবে না। হে আল্লাহ! আমাদের সবাইকে বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করার তৌফিক দান করুন। রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বাইয়ানিস ছাগিরা।
বায়হাকী শরিফে হজরত নোমান (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে হজরত রাসূল (দ.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক জুমার দিনে নিজ মাতা-পিতার অথবা তাদের মধ্যে যে কোনো একজনের কবর জিয়ারত করবে, তাকে মাফ করে দেয়া হবে এবং তাকে পিতা-মাতার প্রতি উত্তম ব্যবহারকারী হিসেবে নাম লিখা হবে। ইবনে মাজাহ শরিফে হজরত মাসুদ (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে হজরত রাসূল (স.) এরশাদ করেন, কবর জিয়ারত দুনিয়ার আসক্তি কমিয়ে দেয় এবং আখেরাতকে স্মরণ বাড়িয়ে দেয়। আহমদ শরিফে হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে হজরত রাসূল (দ.) এরশাদ করেন, আল্লাহ বেহেশতে তার কোনো কোনো বান্দার মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন, বান্দা তাঁর অতিরিক্ত মর্যাদার কারণ আল্লাহর নিকট জানতে চাইলে আল্লাহ বলবেন, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমা চেয়েছে। ইহার জন্য বেহেশতে তোমার মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বোখারী ও মুসলিম শরিফে হজরত আবু হোরায়রা কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল (দ.) এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালার একশত রহমত রয়েছে। যা থেকে মাত্র একটি রহমত তিনি জিন, মানব, পশু-পাখি ও কীট পতঙ্গকে দান করেছেন। একটি রহমতের কারণে প্রত্যেক সৃষ্টি একে অপরকে মায়া-মহব্বত করে। বাকি নিরানব্বইটি রহমত আল্লাহ পরবর্তী সময়ের (আখিরাতের) জন্য রেখে দিয়েছেন। যা দ্বারা তিনি কেয়ামত দিবসে তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। নেক সন্তান মৃত ব্যক্তির জন্য একটি উত্তম হাসানা। নেক সন্তান যতদিন দুনিয়াতে ইবাদতে মশগুল থাকবেন ততদিন পর্যন্ত বাবা-মায়ের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতে থাকবেন। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে যার সন্তান আলেম দীনদার কামেল পরহেজগার মুত্তাকি তিনি অন্যান্য কবরবাসীর তুলনায় পৃথক মর্যাদাবান। কারণ তিনি দুনিয়ার জমিনে না থাকলেও সন্তান তাঁর পিতা-মাতাকে ভুলে যায়নি।
কবর দেখলে বলতে হয় ‘আস সালামু আইকুম ইয়াহলাল কবুর, ওয়া রাহমাতুল্লাহ’। অর্থ হে কবরবাসী! তোমার ওপর শান্তি বর্ষিত হউক। মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সালাম জানানোর পর সূরা ফাতেহা পাঠ করলে কবরবাসীর আত্মা প্রশান্তি লাভ করে। সন্তান বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সালাম দোয়া দুরূদ পাঠ করলে আল্লাহ মৃত ব্যক্তির কবরকে ওই সময়ের জন্য রহমতের চাদর দিয়ে ডেকে দেন। মৃত ব্যক্তির কবর জিয়ারতকালীন সময় কবরে আজাব চলতে থাকলে তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়। সূরা আল ইমরানের ১৩৯নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজের প্রতি অবিচার করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। ওই আয়াতে আল্লাহ তাঁর বান্দাকে আশাহত হতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ প্রত্যাশা করেন বান্দা যত গুনাহ করুক, তারা যেন পুনরায় তাঁর নিকট ফিরে আসে। কারণ আল্লাহ তাঁর বান্দাকে সব সময় ক্ষমা করতে প্রস্তুত থাকেন। আল্লাহ তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য শুধু একটি উছিলা খোঁজেন। কি করে তাঁর বান্দাকে তিনি মাফ করবেন। তাই মৃত্যু পরবর্তী আপনজনের দ্বারা কবর জিয়ারত কিংবা দুনিয়ার জীবনের রেখে যাওয়া যে কোনো একটি সদকায়ে জারিয়া কাজ কবরের আজাব নাজাতের ফায়সালা হয়ে যেতে পারে। যে মাতা দশ মাস গর্ভে ধারণ করল শীত-গরম সহ্য করল সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে উহ আহ শব্দ করল না এবং বাবা মাথার গাম মাটিতে ফেলে সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য রুজি করল। সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করল। অথচ বাবা-মায়ের কবরের পাশে অনেক নিষ্ঠুর সন্তান দেশে থেকেও সময়ের ব্যস্ততার জন্য বাবা-মায়ের কবর জিয়ারতের সময় পায় না। ইহা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক বিষয়। সন্তানের অর্থবিত্ত বৈভব বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। যে কবরে বাবা শুয়ে আছেন, সে কবরে একদিন আমাকে আপনাকে শুইতে হবে। আপনি আপনার বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করলে আপনার সন্তানও আপনার কবর জিয়ারত করবে। আপনার সন্তান আপনার কবর জীবনের দুঃসময়ে আল্লাহর নিকট নাজাতের জন্য প্রার্থনা করবেন। হয়তো আপনার সন্তানের প্রার্থনা আপনার নাজাতের ফায়সালা হয়েও যেতে পারে। কবর জিয়ারতের বহুবিধ ফজিলত রয়েছে। যা সামান্য পরিসরে শেষ করা যাবে না। হে আল্লাহ! আমাদের সবাইকে বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করার তৌফিক দান করুন। রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বাইয়ানিস ছাগিরা।
0 Comments